সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ঘটে যাওয়া দুটি হৃদয়বিদারক ঘটনা বৈশ্বিক গণমাধ্যমের কাভারেজে এক অপ্রত্যাশিত বৈষম্য তুলে ধরেছে, যা অনেক ইরানিকে ক্ষুব্ধ করেছে। একদিকে, ইসরায়েলের বিরশেবা শহরের একটি হাসপাতালে বোমা হামলার খবর দ্রুত এবং ব্যাপক আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। অন্যদিকে, এর মাত্র তিন দিন আগে ইরানের কেরমানশাহ শহরের একটি হাসপাতালেও একই ধরনের হামলা চালানো হয়েছিল, অথচ সেটি বিশ্বের নজরে আসেনি বললেই চলে।
এই আকাশ-পাতাল পার্থক্যের একটি বড় কারণ হলো গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার ও স্বচ্ছতা। ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত ঘটনাস্থলে প্রবেশাধিকার দেয়, তাদের ব্রিফ করে এবং মুক্তভাবে সংবাদ পরিবেশনের সুযোগ করে দেয়। ফলে হতাহতের সংখ্যা এবং ঘটনার নিয়মিত আপডেট দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
এর বিপরীতে, ইরান সরকার সাংবাদিকদের আটকে রাখে, দেশের অভ্যন্তরীণ গণমাধ্যমের ওপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করে এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিত করে। এর ফলস্বরূপ, কেরমানশাহের ঘটনার ক্ষেত্রে কেবল অস্পষ্ট এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অর্থাৎ বেসরকারি সূত্র থেকে যে ভিডিও পাওয়া যায়, সেগুলোই খবরের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। ইসরায়েলি হামলার দুদিন পর ইরান সারাদেশে ২২৪ জন নিহতের তথ্য দিলেও, স্থান অনুযায়ী কোনো বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেওয়া হয়নি। কেরমানশাহর হাসপাতালটি আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেও আর কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়নি।
গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার এবং স্বচ্ছতার অভাবে ইরানের অনেক মর্মান্তিক গল্প হারিয়ে যাচ্ছে। শোকাহত পরিবারগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু ব্যক্তিগত পোস্ট কখনো পরিকল্পিত সংবাদ কাভারেজের বিকল্প হতে পারে না। যুদ্ধের সময়ে যখন বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিক্রিয়ার গতিপথ নির্ধারণ করে, তখন কেরমানশাহর চারপাশে এই নীরবতা ইঙ্গিত দেয় যে, সেন্সরশিপ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একঘরে হয়ে যাওয়ার ফলে কত ভয়াবহ ঘটনাও বিশ্বের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যেতে পারে। সূত্র- বিবিসি বাংলা
আমার বার্তা/জেএইচ