ডায়াবেটিস একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বর্তমান সময়ে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রোগের ব্যাপকতা ও জটিলতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি "ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস" পালন করা হয়। এই দিবসটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি, প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস কী?
ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes Mellitus) একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে ঘটে। এটি মূলত তখনই হয় যখন শরীর ইনসুলিন হরমোন সঠিকভাবে উৎপাদন বা ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় দ্বারা উৎপাদিত একটি হরমোন, যা রক্তে শর্করাকে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে এবং শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ডায়াবেটিসের প্রধান ধরনগুলো হলো:
টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে। এই ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত শিশু ও তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এটি ডায়াবেটিসের সবচেয়ে সাধারণ ধরন, যা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। এই ক্ষেত্রে শরীর ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না বা পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করে না।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: এটি গর্ভবতী নারীদের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত সন্তান প্রসবের পর ঠিক হয়ে যায়। তবে এটি ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ঘন ঘন প্রস্রাব করা
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও ক্ষুধা
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
- ওজন হ্রাস (বিশেষ করে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে)
- ক্ষত শুকাতে বেশি সময় লাগা
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ও জটিলতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করলে এটি বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন:
- হৃদরোগ ও স্ট্রোক
- কিডনি রোগ
- দৃষ্টিশক্তি হ্রাস বা অন্ধত্ব
- স্নায়ুর ক্ষতি (নিউরোপ্যাথি)
- পায়ের আলসার বা সংক্রমণ, যা অঙ্গচ্ছেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে
ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবসের উদ্দেশ্য
২৮ ফেব্রুয়ারি ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো:
সচেতনতা বৃদ্ধি: ডায়াবেটিসের লক্ষণ, ঝুঁকি ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের বার্তা প্রচার করা।
নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক চিকিৎসা, নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা ও ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা।
সামাজিক দায়িত্ব: ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের সহায়তা করার জন্য সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: শর্করা, চর্বি ও লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।
নিয়মিত ব্যায়াম: সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ: ধূমপান ও মদ্যপান ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় এবং জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
নিয়মিত চেকআপ: ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকলে নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা উচিত।
২৮ ফেব্রুয়ারি ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা ডায়াবেটিসের ব্যাপকতা ও জটিলতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারি এবং এর জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে পারি। আসুন, আমরা সবাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হই এবং এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিই।
লেখক : শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ।