নিজের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে দেশজুড়ে বড় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কারাবন্দি নেতা ইমরান খান।
সেইসঙ্গে পিটিআইয়ের যেসব নেতাকর্মী তলে তলে সরকারের সঙ্গে লিয়াজোঁ রেখে চলেছেন, তাদেরকেও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা। খবর জিও নিউজের।
ইমরান খানের মুখপাত্র হিসেবে এ তথ্য জানিয়েছেন তার বোন আলীমা খান। সোমবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন আলীমা।
সাক্ষাৎ শেষে কারাগারের ফটকের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মত বিনিময়কালে তিনি অভিযোগ করেন, ইসলামাবাদে ক্ষমতাসীন বর্তমান সরকার ইমরান খানের সঙ্গে চরম নিপীড়নমূলক আচরণ করছে।
কারাগারে একজন সাধারণ কয়েদিকে যেটুকু অধিকার দেওয়া হয়, ইমরানকে সেটুকুও দেওয়া হচ্ছে না। গত আট মাসে ইমরান খানকে মাত্র একবার তার সন্তানদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে, এমনকি কারা কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছে যে এখন থেকে, ইমরান খানের বোনরাও আর কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।
পিটিআইয়ের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশেও জরুরি বার্তা দিয়েছেন ইমরান খান। দেশজুড়ে বড় আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি।
দলের যেসব নেতাকর্মী গোপনে সরকারের সঙ্গে আঁতাত রেখে চলছে তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, যারা উইকেটের দুই পাশেই খেলতে চায়, দলের মধ্যে তাদের জায়গা হবে না।
তিনি আরও বলেছেন যে সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আপসে যাওয়ার ইচ্ছে বা পরিকল্পনা তার নেই। প্রয়োজনে সারা জীবন কারাগারে কাটাবেন, কিন্তু মাথা নত করবেন না তিনি।
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কারাগার থেকে ইমরান খান আন্দোলনের আহ্বান জানালেও তার দল পিটিআইয়ের হাইকমান্ড সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য চেষ্টা।
এই সংলাপ বা সমঝোতার মূল উদ্দেশ্য ইমরান খানের কারামুক্তি। সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ এখনও শুরু না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু আলাপ-আলোচনা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
সেসব আলাপ-আলোচনার কিছু অগ্রগতিও হয়েছিল। সরকারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় পিটিআইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমরান খানের এক সময়ের আইনজীবী এবং বর্তমানে দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গওহর খান।
ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা এবং তারপর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে বর্তমানে সরকার-পিটিআইয়ের আলাপ-আলোচনা থেমে আছে।
সূত্রের বরাতে আরও জানা গেছে যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহাবাজ শরিফের খাইবার পাখতুনখোয়া এবং তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা মুহম্মদ আলী সাইফ গত সপ্তাহে আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
সেই সাক্ষাতে তিনি সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য ইমরান খানকে প্রস্তাব দিয়েছেন এবং পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা তাতে প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছিলেন। সেই সম্মতির ভিত্তিতেই সরকারের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন ব্যারিস্টার গওহর।
প্রসঙ্গত, কিংবদন্তী ক্রিকেটার থেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে প্রথম ক্ষমতায় আসেন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ের পর।
তবে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের শীর্ষ নির্বাহীর পদে কে আরোহন করবেন— তা নিয়ে সেনবাহিনীর সঙ্গে দন্দ্বের জেরে সংকটে পড়েন তিনি।
বিরোধী দলগুলো সেই সংকটের সুযোগ নেয়, ফলশ্রুতিতে ২০২২ সালের পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যদের অনাস্থাভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন।
এদিকে ক্ষমতা হারানোর পরপরই একের পর এক মামলা দায়ের হতে থাকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে। সেসব মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন ইমরান।
আমার বার্তা/জেএইচ