বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আগামী মাসে রিজার্ভ ২৭ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার হবে। রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার জন্য সময় প্রয়োজন।
বুধবার (২১ মে) পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) আয়োজনে রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। পিআরআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টারের (আইজিসি) সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে আর্থিক উন্নয়নের ভৌগলিক ও ঐতিহাসিক প্রবণতা’ শীর্ষক একটি গবেষণা করেছে পিআরআই। গবেষণার ফলাফল প্রকাশের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস বা মোট রিজার্ভ এখন সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। অন্যদিকে আইএমএফে ব্যালান্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল–৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি। গভর্নর তার বক্তব্যে রিজার্ভের প্রাক্কলনে গ্রস নাকি বিপিএম–৬ বুঝিয়েছেন তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, আগামী মাসে আইএমএফের ১ দশমকি ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড় হওয়ার কথা। আবার বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে। ফলে গভর্নর হয়ত গ্রস রিজার্ভ বুঝিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আহসান মনসুর সর্বোচ্চ সেবা দিতে ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ গবেষণা সেসব অঞ্চল চিহ্নিত করেছে যেখানে আর্থিক সেবা এখনও অসম। আমাদের এখন নিশ্চিত করতে হবে যেন কোনো জেলা বা সম্প্রদায় পিছিয়ে না থাকে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার। তিনি বলেন, ‘এই গবেষণা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নের একটি স্থানিক ও কালানুক্রমিক চিত্র উপস্থাপন করেছে, যা জাতীয় গড়ের আড়ালে থাকা গভীর আর্থিক বৈষম্যকে স্পষ্টভাবে উন্মোচন করেছে। প্রকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক উন্নয়নের জন্য প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে দেশের কোন কোন অঞ্চল ও জনগোষ্ঠী মূলধারার ব্যাংকিং সেবা থেকে বাদ পড়ে আছে।’
পিআরআইর প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণে আর্থিক প্রবেশগম্যতার চরম বৈষম্য ফুটে উঠেছে। জাতীয়ভাবে মাত্র ১ শতাংশ ঋণ হিসাবধারী সমস্ত ঋণের ৭৫ শতাংশ পাচ্ছে এবং ৭৮ শতাংশ ঋণ ঢাকা ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত। দশকব্যাপী ব্যাংক সম্প্রসারণ সত্ত্বেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ধনী পূর্বাঞ্চলে ঘনীভূত রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, তারা দেশের দরিদ্র অঞ্চলে পৌঁছাচ্ছে না বা সেবা দিচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে, পরিস্থিতিগত প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো গরিবদের জন্য ব্যাংকিং সেবা দিতে করছে না।’
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন আইজিসির বাংলাদেশের সিনিয়র উপদেষ্টা ড. নাসিরুদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (পরিসংখ্যান) মো. আনিস উর রহমান।
আমার বার্তা/এমই