বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম সম্মানজনক ‘বুকার পুরস্কার’ পেলেন ভারতীয় লেখক বানু মুশতাক। মঙ্গলবার (১৯ মে) ঘোষণা করা হয় ৭৭ বছর বয়সী এই বিজয়ীর নাম। খবর বিবিসির।
কান্নাড়া ভাষায় রচিত গল্পসমগ্র ‘হার্ট ল্যাম্প’ বইটির জন্য বিশেষ এই সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। প্রথমবারের মতো কোনো গল্পসংকলন আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেল। বইটি ইংরেজি ভাষায় অনূদিত করেছেন দিপা ভাস্তি।
লন্ডনের টাটা মডার্ন মিউজিয়ামে মঙ্গলবার রাতে আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লেখকদের মধ্য়ে দাঁড়িয়ে পুরস্কারটি হাতে তুলে নেন বানু মুশতাক এবং তার অনুবাদক দীপা ভাস্তি।
১৯৯০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন দশক ধরে মুশতাকের লেখা ১২টি ছোটগল্প সম্বলিত ‘হার্ট ল্যাম্প’ বইটিতে দক্ষিণ ভারতে বসবাসকারী মুসলিম নারীদের দৈনন্দিন জীবনের টানাপড়েন, স্বামী, শাশুড়ি ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংঘাত এবং তাদের প্রতিরোধের গল্প উঠে এসেছে।
বানু মুশতাক পেশায় আইনজীবী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী। তিনি বলেন, “আমার গল্পগুলো সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতির দ্বারা নারীদের ওপর আরোপিত নিঃশর্ত আনুগত্যের দাবি এবং তার ফলে সৃষ্ট নিষ্ঠুরতার প্রতিচ্ছবি। আমার হৃদয়ই আমার গবেষণাক্ষেত্র।”
পুরস্কারপ্রাপ্তির পর বানু মুশতাক অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন, “যেন হাজারো জোনাকি ক্ষণিকের জন্য আকাশে সম্মিলিতভাবে তীব্র আলো ছড়াচ্ছে। এই বইটি আমার ভালোবাসার বার্তা- এই বিশ্বাস থেকে যে কোনো গল্প শুধুই ‘স্থানীয়’ নয়। আমার গ্রামের বটগাছের নিচে জন্ম নেওয়া গল্পও আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলো ফেলতে পারে।”
বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ম্যাক্স পোর্টার ‘হার্ট ল্যাম্প’-কে ‘ইংরেজি পাঠকদের জন্য সত্যিকারের নতুন কিছু’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘হার্ট ল্যাম্প শুধু নিপীড়নের গল্প নয়, এতে রয়েছে সাহস, রসিকতা ও ব্যঙ্গ। এটি একটি বিপ্লবাত্মক (র্যাডিক্যাল) অনুবাদ, যা ভাষার গতিপথ বদলে দেয়, ভিন্ন ভিন্ন ইংরেজির মধ্যে নতুন রূপ ও ছোঁয়া তৈরি করে।’
তিনি আরও বলেন, “অনুবাদটিও ছিল ব্যতিক্রমী। যেখানে অধিকাংশ অনুবাদ পাঠকের কাছে মূল ভাষা আড়াল করে রাখতে চায়, সেখানে দীপ্তা ভাস্তির অনুবাদ ছিল ‘দৃশ্যমান’- ভারতীয় অভিব্যক্তি ও কথার ভঙ্গি গল্পগুলোকে প্রাণবন্ত করেছে।”
বানু মুশতাক কান্নাড়া ভাষায় লেখালেখি করেন। এই ভাষার লেখকদের মধ্যে তিনিই প্রথম বুকার পুরস্কার পেলেন। পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার পাউন্ড (৬৭ হাজার ডলার), যা অনুবাদক দীপা ভাস্তির সঙ্গে তিনি সমানভাবে ভাগ করে নেবেন।
আমার বার্তা/এল/এমই